প্রাথমিক ইন্টারভিউ প্রশ্ন এবং উত্তর; প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ইন্টারভিউ প্রশ্ন-উত্তর এর নমুনা আমরা নিচে বিস্তারিত হবে আলোচনা করেছি। পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক পর্ষদ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ইন্টারভিউ খুব শীঘ্রই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে। তাই আমরা বিগত বছরের ইন্টারভিউ কি কি কোশ্চেন জিজ্ঞাসা করেছিল সেগুলো বিভিন্ন প্র্যাক্টের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছি তাই তোমাদের সুবিধার্থে জন্য সেই কোশ্চেনগুলি নিজে খুব সুন্দরভাবে আলোচনা করা হলো । আজ এই নিবন্ধে ইন্টারভিউ এর প্রস্তুতিতে সহযোগিতা করার জন্য সেই ধরনের কিছু কমন প্রশ্ন (WB Primary Interview) এখানে আলোচনা করছি।
প্রাথমিক ইন্টারভিউ প্রশ্ন এবং উত্তর 2025 | |
পরীক্ষার নাম | West Bengal Teachers Eligibility Test (WB Primary TET) |
পরীক্ষা পরিচালনাকারী সংস্থা | West Bengal Board of Primary Education (WBBPE) |
পরীক্ষার স্তর | রাজ্য-স্তর |
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট | www.wbbprimaryeducation.org |
প্রশ্ন-কোন রাজনৈতিক দল বা স্থানীয় মানুষ অনুষ্ঠান করার জন্য স্কুলের ঘর বা মাঠ ব্যবহার করতে চাইলে তার কি অনুমতি দেওয়া ঠিক হবে বলে তোমার মনে হয়?
উত্তর-গণতান্ত্রিক দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি জনগণরই ইমারত। তাই এর সুস্থ ও সঠিক ব্যবহার জনগণের জন্য জনগণের দ্বারাই হওয়া উচিত। আমার মনে হয় স্কুল চলাকালিন সময়ে যে কোন রাজনৈতিক দলের প্রভাব খাটিয়ে স্কুল বন্ধ রেখে সম্মেলন করা উচিত নয়। এতে শিক্ষা দিবস নষ্ট হবে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষতি হবে। তবে ছুটি চলাকালীন সময়ে স্কুলের অনুমতি নিয়ে রাজনৈতিক সম্মেলন বা স্থানীয় বসবাসকারীরা বিভিন্ন অনুষ্ঠান করলে তাতে শিক্ষার্থীদের পঠন-পাঠনের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না। কিন্তু যারা অনুষ্ঠান করবে বা সম্মেলন করবে তাদের লক্ষ্য রাখতে হবে স্কুলের আসবাবপত্র বা অন্যান্য সম্পদ-সম্পত্তির ক্ষতি যেন না হয়।
প্রশ্ন-তুমি কি পণপ্রথা সমর্থন করো?
উত্তর-বিয়ের মাধ্যমে দুটি পরিবার শুধু নয়, দুটি মানব-মানবির মধ্যে আত্মার মিলন স্থাপিত হয়। ফলে এখানে সম্পদ বা বস্তু সামগ্রীর আদান-প্রদান কাম্য নয়। তাই শুধু পণপ্রথা নয়, এই ধরণের যত নিষ্ঠুর ও অমানবিক প্রথা আছে, সেগুলোকে আমি সমর্থন করি না।
প্রশ্ন-মানবাধিকার কি? এটি রক্ষা করা কেন প্রয়োজন?
উত্তর-মানবাধিকার হলো একটি মানুষের সুস্থ ও সঠিক ভাবে বেঁচে থাকার অধিকার। মানবাধিকার রক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল মানবকল্যাণ ব্যক্তি, গোষ্ঠী, দেশ ও আন্তর্জাতিক স্তরে শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং মানুষের ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশে সাহায্য করার জন্য মানব অধিকার রক্ষা করা দরকার। মূলত সামাজিক পরিবেশ সুরক্ষিত করা ও পার্থিব পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা এর মূল উদ্দেশ্য।
প্রশ্ন-সরস্বতী পুজো কতটা গুরুত্বপূর্ণ স্কুলে?
উত্তর-বিষয়টি দুটি দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাখ্যা করা যায়। একটি ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে এবং অন্যটি বাঙ্গালীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হিসাবে। যদি ধর্মীয় দিক থেকে দেখা হয় তাহলে হিন্দু ধর্মে যারা বিশ্বাস করেন তাদের জন্য এটি বিদ্যালয়ে পালন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অন্য ধর্মে যারা বিশ্বাসী তাদের কাছে বিষয়টি তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয় বা কিছু ক্ষেত্রে গুরুত্বহীন।
কিন্তু যদি মনে করা হয় এটি একটি বাঙ্গালীর সংস্কৃতি এবং সেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হিসাবে এটা পালন করা হচ্ছে, তবে সেটা পালন করা যেতে পারে। তবে সরস্বতী পুজো কোন বিদ্যালয়ে পালনের ক্ষেত্রে সেই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের, অভিভাবকদের, স্থানীয় বিদ্যালয় নেতৃত্ববৃন্দের আবেগকে গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রশ্ন-বর্তমান বেকারত্ব বিষয়টাকে আপনি কিভাবে দেখছেন? সরকারের এ সম্পর্কে কি রূপ পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করছেন?
উত্তর-বর্তমান দিনে বেকারত্ব একটি বিরাট সমস্যার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেকারত্ব নিয়ে শুধু যে আমাদের রাজ্য বা আমাদের দেশ সমস্যার সম্মুখীন তা কিন্তু নয়। গোটা পৃথিবী এর সঙ্গে মোকাবিলা করছে। যেভাবে জন বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেই তুলনায় কাজের সুযোগ তৈরি হয়নি। তাছাড়া বর্তমান মানব সভ্যতা যন্ত্র নির্ভর হয়ে পড়ায় এবং পুঁজিবাদী শক্তির আস্ফলনের জন্য এই বেকারত্ব দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সরকার চেষ্টা করছে বিভিন্ন ভাবে এই বেকারত্ব কমানোর আমাদের রাজ্যে রাজ্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে, বিভিন্ন ভাবে লোন দিয়ে, ছোট ছোট হাতের কাজ শিখিয়ে সকলকে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করছে। রাজ্য সরকারের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারও চেষ্টা করছে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে স্বাবলম্বী করার জন্য । তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হচ্ছে সেগুলি সঠিক ভাবে কঠোর হাতে মোকাবিলা করা দরকার। পাশাপাশি সমাজের সকল স্তরের মানুষের এগিয়ে আসা উচিত এই সমস্যা সমাধানের জন্য। এছাড়া যারা এখনো স্বাবলম্বী হতে পারেননি তাদেরও উচিত নিজেদের স্বাবলম্বী করার বা বেকার এই তকমা ঘোচানোর জন্য নিজের সবটা দিয়ে চেষ্টা করা।
প্রশ্ন-কোভিড পরিস্থিতে স্কুল খোলা ঠিক না। ভুল তার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তি দাও।
উত্তর-একজন শিক্ষার্থীর স্কুলে লেখাপড়ার পাশাপাশি সার্বিক বিকাশ ঘটে, এছাড়া কোন স্থানে তার স্বতঃস্ফূর্ত সার্বিক বিকাশ সম্ভাব নয়। এমত অবস্থায় প্রায় দীর্ঘ 2 বছর। শিশুরা বিদ্যালয়ে আসতে পারছেনা। তারজন্য দেখা গেছে শিশুদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধিকতা সৃষ্টি হয়েছে, এই ভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে শিশুরা হারাবে তাদের শৈশব। এই গুলি আমরা বিভিন্ন রিপোর্ট বা গবেষণা পত্রেও প্রকাশিত হতে দেখেছি। এমত অবস্থায় বিদ্যালয় শিশুদের জন্য খোলা খুবই দরকার ছিল। সরকার বা শিক্ষা বিভগের অধিকর্তারাও বিষয়টি নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন ছিলেন। সেইমত স্বাস্থ্য দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করেই সরকার এই স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নেয়। আমি ব্যক্তিগত ভাবে বিষয়টিকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।
প্রশ্ন-বর্তমান অনলাইনে পড়াশুনার ব্যবস্থা শিশুদের জন্য কতটা ইতিবাচক ও কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে আপনি মনে করছেন?
উত্তর-অনলাইন পাঠদান করনাকালে পৃথিবীব্যাপী সরাসরি পাঠদানের বিকল্প হয়ে উঠেছে। এই পদ্ধতি পাঠদানের ফলে শিক্ষার্থীর অবস্থান যেখানেই হোক না কেন সে কিন্তু তার শিক্ষকের থেকে পাঠ নিতে পারবে। অনলাইন পঠনপাঠন অবস্থায় শিক্ষার্থী শিক্ষক সরাসরি কথা বলতে পারে, একজন আর একজনকে দেখতে পায়, গ্রুপ স্টাডি করতে পারে, পরস্পর পরস্পরের স্ক্রিন শেয়ার করতে পারে। অনেক কম সময়ে খুব সুন্দর ভাবে নির্দিষ্ট বিষয়ে পঠনপাঠন সম্পন্ন করা যায়। কোন রূপ শ্রেণীকক্ষ প্রয়োজন হয়না। কিন্তু এই অনলাইন শিক্ষাদানের অনেক অসুবিধাও আছে। প্রথামত এটি শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য একেবারেই স্বাস্থ্যকারী ব্যবস্থা নয়।
বিদ্যালয় পরিবেশে একজন শিক্ষার্থীর যে মানসিক বিকাশ হয়, এক্ষেত্রে সেটি কোন ভাবেই সম্ভব নয়। বিদ্যালয় পরিবেশে শিশুদের মধ্যে যে সহপাঠ্যক্রমিক কাজের মধ্য দিয়ে সার্বিক বিকাশ ঘটে, সেটি অনলাইন পাঠদানের মাধ্যমে একদমই সম্ভব নয়। তার উপর শিশুদের মোবাইলের প্রতি বা একটি ভার্চুয়াল জগতের প্রতি ঝোঁক বেড়ে যায়, যেটি শিশুর ভবিষ্যতের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। সেইজন্যই একটু বড়ো বাচ্চাদের জন্য অনলাইন পাঠদান কিছুটা কার্যকারী হলেও শিশুদের জন্য একেবারেই কার্যকরী নয়।
প্রশ্ন-বর্তমানে যেটা মনে করা হচ্ছে যে স্কুলে droup out শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে গেছে, শিক্ষক হিসাবে আপনি এমত অবস্থাত কি করবেন?
উত্তর-আমরা সকলে জানি কোভিড পরিস্থিতির জন্য প্রায় দুই বছর শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে পারেনি। এমত অবস্থায় পৃথিবী জুড়ে একটি সমস্যা বেড়েছে স্কুল বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তা হলো droup out । এমত অবস্থায় শিক্ষক হিসেবে হিসাবে আমার প্রধান কাজ হবে ড্রপ আউট বাচ্চাগুলিকে চিহ্নিত করা। তারপর তাদের ড্রপ আউটের উপযুক্ত কারণ জানা এবং সে যদি কাজে যুক্ত হয়ে যায় তবে তার গার্জেন কে বোঝানো এই বয়সটা তার বাচ্চার লেখাপড়া শেখার বয়স । পাশাপাশি তাদের আর্থিক সমস্যা থাকে যদি সে বিষয়ে কোন ব্যবস্থা করা যায় তার চেষ্টা করব। তারপর বাচ্চাটিকে স্কুলমুখী করব, তার উপর স্পেশাল নজর রাখব, প্রয়োজনে তার কাউন্সেলিং করব। পাশাপাশি আমার সমস্ত ক্লাসগুলি তাদের জন্য আরও আকর্ষণীয় করে তুলব যাতে যে বেশি করে বিদ্যালয়ের প্রতি বা লেখাপড়ার প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে।
প্রশ্ন-প্যারাটিচার নিয়োগ কি আপনি সমর্থন করেন?
উত্তর-প্যারাটিচার বা পার্শ্বশিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছিলো প্রাথমিক ও উচ্চগ্রাথমিক স্তরে শিক্ষার সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে, সর্বশিক্ষা মিশনের অধীনে। এই নিয়োগ ছিল সম্পূর্ণভাবে অঞ্চলভিত্তিক। প্যারাটিয়ার নিয়োগের ক্ষেত্রে যে উদ্দেশ্য ছিল সেটি কিন্তু যথেষ্ট যুক্তিপূর্ণ- প্রধানত স্কুল ছুট বাচ্চাদের স্কুলমুখী করা এবং ড্রপ আউট রোধ করার জন্য এলাকা ভিত্তিক সমস্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং উর্দ্ধতন অথোরিটিকে সেটি রিপোর্ট করা। যখন প্যারাটিভার প্রথম পর্যায়ে নিয়োগ হয় সেই বিষয়টি কিন্তু যথেষ্ট সমর্থন যোগ্য বিষয় ছিল।
প্রশ্ন-রাজবংশী মাধ্যমে নিউ সেটআপ স্কুলের জন্য যে প্যারাটিচার নিয়োগের অর্ডার বেরিয়েছিল, আপনি এই বিষয়টি কি ভাবে দেখছেনদেখছেন?
উত্তর-আমি মনে করছি বিষয়টি বেশ সাধুবাদ জানানোর মতো বিষয়। কারণ এই নিউ সেটআপ স্কুলগুলি প্রাথমিক ভাবে পরিচালনার জন্য লোকাল ভিত্তিক এবং সেই ভাষা বা উপভাষা ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ প্রয়োজন। সেই দিক থেকে এক্ষেত্রে যে প্যারাটিচার নিয়োগ করা হচ্ছে সেটি বেশ ভালো দিক। তবে প্যারাটিচারদের ষান্মানিক আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি আরোও একটু ভালো হওয়া প্রয়োজন।
প্রশ্ন-আদেশ ও শৃঙ্খলার মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তর-শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আত্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আচরণের মধ্যে যে সংহতি আনে তাকেই বলে প্রকৃত শৃঙ্খলা বা মুক্ত শৃঙ্খলা। আবার শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠানের বিধিনিষেধ মেনে চলার নির্দেশকে বলে আদেশ। আদেশ-নির্দেশের সঙ্গে শাস্তির ভয় থাকে।
প্রশ্ন-কৃত্রিম শৃঙ্খলা বলতে কি বোঝেন?
উত্তর-শাস্তির ভয় দেখিয়ে অথবা পুরষ্কারের লোভ দেখিয়ে কৃত্রিম উপায়ে ব্যক্তির মধ্যে যে নিয়মানুবর্তিতার সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় কৃত্রিম বা বহিরজাত শৃঙ্খলা।
প্রশ্ন-সমাজে শিক্ষক হিসাবে আপনার ভাবমূর্তি কেমন হওয়া উচিত?
উত্তর-সমাজে শিক্ষক হিসাবে হবু শিক্ষকদের ভাবমূর্তি কার্যকারী হওয়া উচিত ।
প্রশ্ন-আপনার কোন নিকটতম বন্ধু অথবা সহকর্মীর মৃত্যু হলে আপনি কি করবেন?
উত্তর-প্রথমত বন্ধুকে বা সহকর্মীর পরিবারকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করব যে আমি বা আমরা তোমাদের/আপনাদের সঙ্গে আছি, বেশি ভেঙে পড়ার কোন কারণ নেই। তারপর যত দ্রুত সম্ভব ঘটনাস্থলে পৌঁছাবো এবং তাকে যত রকম সাহায্য করা আমার পক্ষে সম্ভব তা করবো। আর যদি না যেতে পারি তাহলে দূরে থেকেও যতরকম সাহায্য করা সম্ভব তা করব।